বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অবস্থিত একটি এনজিও। আন্তর্জাতিক হার্ট সোসাইটির সাথে আন্তর্জাতিক হার্ট ফাউন্ডেশন মিলিত হয়ে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন গঠিত হয়। বিশ্ব হৃদয় দিবসের এই বার্ষিক অনুষ্ঠাণের ধারণাটি ১৯৯৭-৯৯ সাল থেকে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের সভাপতি মিঃ অ্যান্টনি বেয়েস ডি লুনা দ্বারা কল্পনা করা হয়েছিল । তারপর ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী নেতারা ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধি থেকে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার ২৫% কমাতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হন। আপনারা জেনে থাকবেন অসংক্রমক রোগের মধ্যে হৃদরোগ এক নম্বর হত্যাকারী। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একত্রিত হওয়ার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী রোগের বোঝা কমানোর জন্য বিশ্ব হৃদরোগ দিবস হলো একটি আদর্শ প্লাটফরম। প্রর্তুগালের লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডীন এবং ডি সান্তা মারিয়া হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ফাস্টো জে পিন্টো বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি।
বিশ্ব হৃদয় দিবসটি মূলতঃ (২০১১ সাল পর্যন্ত)সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার ২৪ সেপ্টেম্বর তাকিনফ নামক স্থানে প্রথম উদযাপন করা হয়েছিল। বিশ্বে যত লোক মারা যায় তার মধ্যে হৃদরোগের কারণে মারা যায় সবচেয়ে বেশী।
পরবর্তীতে হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর বৈশ্বিক ক্ষতিকর প্রভাবকে অস্বীকার করার জন্য এবং কিভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হৃদরোগ দিবস পালন করার সিধান্ত গৃহীত হয় ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন কর্তৃক এই তারিখকে আন্তর্জাতিক ছুটির দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
এই দিবসটির ২০২২ সালের মূল বক্তব্য
’আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’
প্রধান জিগির(Slogan):-
‘সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যের প্রচারণা, ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়ন।‘
(Health Promotion for well-being, Equity and Sustainable Development)
নীতিবাক্য(Motto):-
‘হৃদয়কে সমাজের জন্য, আপনার প্রিয়জনদের জন্য এবং আপনার জন্য ব্যবহার করুন।‘
(Use Heart for Society, your loved ones and you)
কেন বিশ্ব হৃদয় দিবসঃ
বিশ্বব্যাপী মানুষকে অবহিত করানো যে, হৃদরোগ(১৭.১ মিলিয়ন) ও স্ট্রোক সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগ সমূহ মৃত্যুর প্রধান কারন যা প্রতি বছর ১৮.৬ মিলিয়ন(এক কোটী ৮৬ লক্ষ) মানুষের মৃত্যু ঘটায় এবং তার জন্য জনগণ যে সব পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব তা’ তুলে ধরা।
কিভাবে পালন করা হয়ঃ
১। তহবিল সংগ্রহ, ২। সচেতনতা সৃষ্টি , ৩। সেমিনার – সিম্পোজিয়াম, ৪। পথ সভা, ৫। সমাবেশ(Rally) ৬। মানব বন্ধন, ৭। বেনার-ফেস্টোন-লিফলেট, ৮। ম্যারাথন দৌঁড়, ৯। প্রবন্ধ লিখন ১০। খেলা-ধুলা প্রতিযোগিতা(Sporting events), ১১। বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা ১২। সপ্তাহ পালন ১৩। অন্যান্য প্রচার মাধ্যম
বিশ্ব হার্ট দিবসে মাতৃভূমি হার্ট কেয়ারের শুভেচ্ছাঃ
আমরা প্রার্থনা করি সমগ্র বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাদেশী আপামর জনগণের হৃদয় সব সময় সুস্থ এবং সুখী থাকুক। তার জন্য যেখানে যা’ করা সম্ভব মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার দায়িত্ব নিয়ে তা’ সর্বদাই করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে ইনশা-আল্লাহ।
শুধু মাত্র শুভেচ্ছা নয়, মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার হৃদ রোগ প্রতিরোধের ও প্রতিষেধকের জন্য বাস্তব কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মাতৃভূমি হার্ট কেয়ারের কর্মসূচিকে প্রধানতঃ দু’টি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়।
১। প্রতিরোধক(Prevetive)
২। প্রতিষেধক(Curative)
প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সাধারন জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, লিফলেট-ফোষ্টার-ফেস্টোন বিতরণ, জাতীয় প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রবন্ধ সাক্ষাতকার প্রদান, টেলিভিশনে প্রচার টকশো, সাক্ষাৎকার, সোশাল মিডিয়ায় প্রচার, বিশ্ব হার্ট দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় –আন্তর্জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রেলি-মানব বন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
প্রতিষেধক মূলক কর্মসূচি মধ্যে রয়েছে ‘মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার’ নামক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে আগত সম্ভাব্য রোগীদের রোগ নির্ণয়, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা পরামর্শ, অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ দ্বারা খাদ্য তালিকা প্রদান, অভিজ্ঞ ট্রেইনারের মাধ্যমে যোগ-ব্যায়াম প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন ইনভেষ্টিগেশনের মাধ্যমে যাদের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে ব্লক ধরা পড়ে তাদেরকে কোনরূপ কাটা-ছেঁড়া ব্যতিরেকে অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড মেশিনের (ECP) সাহায্যে ব্লকের বাইপাস করানো হয় এবং খাদ্য এবং ঔষুধের দ্বারা ব্লকের সাইজ ছোট করানো হয়।
হৃদরোগ যাতে না হয় তার জন্য নিম্নোক্ত আলোচনার প্রতি প্রত্যেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ
অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহন, ব্যায়ামের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি(), রক্তে চিনির মাত্রা বেশী এবং অন্যান্য সে সব অবস্থা যা’ হৃদরোগের কারন হতে পারে এবং আমাদের প্রিয়জনদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে ; এইসব তথ্যাবলি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যি বিশ্ব হৃদয় দিবস উদযাপনের আন্তর্জাতিক কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। বিষয়টি অধিকতর স্পষ্ট করার জন্য নিম্নে প্রত্যেক কারন গুলি স্বতন্ত্রভাবে পেশ করা হলো।
১। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ
তেল-চর্বি মুক্ত খাদ্য, প্রানিজ উৎস নয়, ভেসজ উৎস
২। জীবনাচরণ পরিবর্তনঃ
নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম মতো খাওয়া, হাঁটা, ঘুমানো
৩। ব্যায়ামঃ
প্রতিদিন খালিপেটে কমপক্ষে ৩৫ মিনিট হাটা
৪। দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবনঃ
নির্মোহ জীবন
৫। আসক্তি মুক্তঃ
ধুমপান, মদ্যপান, বা অন্য কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহন না করা
৬। নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসঃ
রক্তের চিনির মাত্রা নিম্ন রূপ থাকতে হবে।
খালি পেটে(FBS) ৫-৬, খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর(PPBS) ৭-৮, তিন মাসের গড়(HbA1c) ৬-৭।
৭। নিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্ত চাপঃ
রক্তচাপ নিম্নোক্ত সীমায় থাকবে-উপরেরটা(Systolic)-৯০-১২০, নীচেরটা (Diastolic) ৬০-৮০
৮। নিয়ন্ত্রিত ওজনঃ
ওজন নিয়ন্তিত কিনা তা’ বুঝার জন্য বিএমআই(BMI) জানা দরকার। যা’ ১৮.৬ – ২৩.৯ মধ্যে থাকতে হবে। বিএমআই জানার জন্য শরীরের ওজন কেজিকে মিটারের উচ্চতার বর্গ দিয়ে ভাগ করতে হবে। বিষয়টি একটি উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে। ধরা যাক কোনো ব্যক্তির শরীরের ওজন ৮০ কেজি, উচ্চতা ১.৬ মিটার।। ১.৬ এর বর্গ হচ্ছে ২.৫৬। ৮০ কে ২.৫৬ দিয়ে ভাগ করলে যা হয় তাই উক্ত ব্যক্তির বিএমআই(৩১.১৭) ।
হৃদরোগ সৃষ্টির প্রধান ঝুঁকি সমূহঃ
১। উচ্চরক্ত চাপ
২। রক্তে মাত্রা অতিরিক্ত চর্বি(lipids-cholesterol& triglycerides)
৩। ডায়াবেটিস
৪। শরীরের অতিরিক্ত ওজন(overweight/obesity)
৫। ধুমপান
৬। শারীরিক অকর্মনতা
৭। মানসিক চাপ
লেখক: ডা:এম এম রহমান,
গবেষক, চিকিৎসক ও চিফ কন্সালটেন্ট
মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার
রুপায়ন তাজ, লেভেল ৬,
কালভার্ট রোড, নয়া পল্টন
ফোনঃ ০১৩২৪৭৩০৫১৮ / ০১৩২৪৭৩০৫১০